শেখ মুজিবুর রহমানের ১৫ আগস্টের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গভীর শোকাবহ অধ্যায়।
নিচে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করছি—
পটভূমি
শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি (পরে প্রধানমন্ত্রী)। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি দেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তবে স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, দুর্ভিক্ষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক বিরোধের কারণে দেশে অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর ঘটনা
১৯৭৫ সালের ভোরে (১৫ আগস্ট, শুক্রবার) ঢাকা শহরে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য অভ্যুত্থান ঘটায়।
তারা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং নির্মমভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে।
এই হত্যাকাণ্ডে নিহত হন—
-
শেখ মুজিবুর রহমান
-
তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
-
তিন পুত্র: শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল (মাত্র ১০ বছর বয়সী)
-
দুই পুত্রবধূ: সুলতানা কামাল, রোজী জামাল
-
পরিবারের আরও বেশ কয়েকজন আত্মীয় ও কর্মচারী
শুধু দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন বিদেশে থাকায় বেঁচে যান।
হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য
-
রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল
-
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রভাব ও জনপ্রিয়তাকে চিরতরে শেষ করা
-
সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা
পরবর্তী পরিস্থিতি
-
শেখ মুজিব হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।
-
হত্যাকারীদের বিচার থেকে রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়।
-
দীর্ঘ ২১ বছর ধরে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
-
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বিচার কার্যক্রম শুরু করে।
জাতীয় শোক দিবস
বাংলাদেশে ১৫ আগস্ট সরকারিভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এই দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে, কালো পতাকা উত্তোলন ও নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
-
এই দিনটি শুধু একজন রাষ্ট্রপতির মৃত্যু নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর মোড় পরিবর্তনের দিন।
-
গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত হয়ে সামরিক শাসনের সূচনা হয়।
-
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথ দীর্ঘদিন থমকে যায়।