"প্রকৃতি" (Pakriti) শব্দের অর্থ হলো ― প্রকৃত অবস্থা, স্বাভাবিকতা, সৃষ্টিজগৎ বা পরিবেশ। দর্শন, সাহিত্য ও বিজ্ঞানে প্রকৃতির তাৎপর্য ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত হয়। নিচে সংক্ষেপে "প্রকৃতি" নিয়ে আলোচনা করা হলো:
প্রকৃতির সংজ্ঞা
প্রকৃতি বলতে আমরা সাধারণত পৃথিবীর পরিবেশ, গাছপালা, নদনদী, আকাশ, বাতাস, জীবজন্তু এবং চারপাশের ভৌত জগৎকে বুঝি। আবার দর্শনশাস্ত্রে "প্রকৃতি"কে বলা হয় ― সৃষ্টি ও পরিবর্তনের মূল উপাদান।
দর্শন ও ধর্মে প্রকৃতি
-
ভারতীয় দর্শনে
-
সাংখ্য দর্শনে প্রকৃতি হলো জড় সত্তা, যা "পুরুষ" (চেতন সত্তা)-এর সঙ্গে মিলেই জগৎ সৃষ্টি করে।
-
এখানে প্রকৃতির তিনটি গুণ আছে: সত্ত্ব, রজ, তম।
-
-
ইসলামে
-
প্রকৃতিকে আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন বলা হয়।
-
কুরআনে বলা হয়েছে, আকাশ-জমিন, সূর্য-চন্দ্র, বায়ু-বৃষ্টি — সবই মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি।
-
-
পশ্চিমা দর্শনে
-
এরিস্টটল ও অন্যান্য দার্শনিকেরা প্রকৃতিকে বলেছেন "প্রথম কারণ" বা সৃষ্টির ভিত্তি।
-
প্রকৃতির গুরুত্ব
-
প্রকৃতি আমাদের অস্তিত্বের মূলভিত্তি।
-
খাদ্য, পানি, বায়ু, ওষুধ সবই প্রকৃতি থেকে আসে।
-
শিল্প, সাহিত্য ও কবিতায় প্রকৃতি চিরকাল প্রেরণার উৎস।
-
মানুষের মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক অপরিহার্য।
প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
আজকের পৃথিবীতে দূষণ, বননিধন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি মারাত্মক হুমকির মুখে।
-
গাছপালা কেটে ফেলার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
-
নদী-নালা দখল ও দূষণে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।
-
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদি বেড়ে গেছে।
তাই প্রকৃতিকে রক্ষা করা শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের বেঁচে থাকার শর্ত।
✅ উপসংহার
প্রকৃতি হলো স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি, মানুষের জীবনধারণের অবলম্বন। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাই আমাদের উচিত প্রকৃতিকে ভালোবাসা, দূষণ থেকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখা।