কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে কঠিন পরীক্ষার মুখে ভারতের কূটনীতি

rasel miah
0


 

ভারতের আহমেদাবাদে ১ আগস্ট একটি সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাছবি: রয়টার্স

ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার খুব কাছাকাছি অবস্থানে চলে গিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলী হস্তক্ষেপে দুই দেশই সেই অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের পর বৈশ্বিক কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখন কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়েছে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার কারণে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আন্তর্জাতিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এমন অবস্থানের কারণে ভারত আঞ্চলিক সংকট (যেমন শ্রীলঙ্কার ভেঙে পড়া অর্থনীতি কিংবা মিয়ানমারের ভূমিকম্প পরিস্থিতি) মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির আওতায় যে বিস্তৃত আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ভারত সম্ভবত তাতে আগ্রহী নয়। এই যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।


 




কিন্তু কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলায় সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এই সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৬৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অতি সংবেদনশীল জায়গায় স্পর্শ করেছে।

কাশ্মীর সংকটে ভারতের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন আদায়ের যে কূটনৈতিক সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর। এই ভারসাম্য কতটা সফলভাবে রক্ষা করা যায়, তার ওপরই নির্ভর করবে কাশ্মীর ইস্যুতে ভবিষ্যৎ সংঘাতের গতিপথ।

ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির আওতায় যে বিস্তৃত আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ভারত সম্ভবত তাতে আগ্রহী নয়। ফলে এই যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

দুই দেশের এই যুদ্ধবিরতি কতটা ভঙ্গুর, তা বোঝা যায় গত শনিবার রাতে দুই দেশ যখন পরস্পরের বিরুদ্ধে গুরুতর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে।

কুগেলম্যান আরও উল্লেখ করেন, উত্তেজনা যখন চরমে পৌঁছে গিয়েছিল, তখন ‘অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়।

গত রোববার যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি এই দুই মহান দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে বাণিজ্য বাড়াতে যাচ্ছি।’

ভারত কাশ্মীরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং মনে করে, এ নিয়ে কোনো আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। বিশেষ করে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার মাধ্যমে তারা এ আলোচনা চায় না। হিমালয়ঘেরা নয়নাভিরাম অঞ্চলটি আংশিকভাবে শাসন করে ভারত ও পাকিস্তান। তবে উভয় দেশই পুরো অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

ইতিমধ্যে কাশ্মীর নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটি যুদ্ধ ও বহু ছোট–বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। ভারতের দাবি, এসব হামলার পেছনে পাকিস্তান-সমর্থিত বিদ্রোহীরা দায়ী। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা–বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানি মন্তব্য করেন, ‘মার্কিন চাপের মুখে মাত্র তিন দিনের মধ্যে সামরিক অভিযান বন্ধ করে ভারত আসলে আন্তর্জাতিক মনোযোগ টেনে নিচ্ছে কাশ্মীর বিতর্কের দিকে—সীমান্তপারের সেই সন্ত্রাসবাদের দিকে নয়, যার কারণে এই সংকটের সূচনা হয়েছিল।’

কাশ্মীর নিয়ে নিয়মিত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজনের পর থেকে কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্ব মূলত এই দুই প্রতিবেশী দেশকে একই ছাঁচে দেখত।

তবে আংশিকভাবে ভারতের অর্থনৈতিক উত্থানের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে, পাকিস্তান যেখানে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতি ভারতের এক-দশমাংশের কম।

কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ট্রাম্পের প্রস্তাব এবং ভারত ও পাকিস্তানের বৃহত্তর বিরোধ নিয়ে নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা শুরু করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ঘোষণা অনেক ভারতীয়কে ক্ষুব্ধ করেছে।

কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের জন্য পাকিস্তান একাধিকবার প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানালেও ভারত এ যুদ্ধবিরতিতে তৃতীয় কোনো পক্ষের ভূমিকা স্বীকার করেনি। বরং ভারত বলেছে, এই সমঝোতা সম্পূর্ণভাবে দুই দেশের পারস্পরিক আলোচনার ফল।

নিয়োজিত নিউজ 🖋️🖋️

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)